এক নজরে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বারি, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) দেশের সর্ববৃহৎ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বারি বর্তমানে ২১১ টি ফসল (ধান, পাট, আখ, চা, গম ও ভূট্টা ব্যতিত) নিয়ে গবেষণা করে। এটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সারাদেশে বারি'র আটটি আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মধ্যে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম অন্যতম। এটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর এবং ফেনী জেলাকে প্রতিনিধিত্ব করে। কেন্দ্রটি কৃষি-পরিবেশ অঞ্চল (এইজেড) ২৩-চট্টগ্রাম কোষ্টাল প্লেইন এর অন্তর্ভূত। তবে এইজেড ২৯ -ইস্টার্ন হিলসও এর গবেষণার আওতাভুক্ত। এটি ১৯৫৬ সালে বীজ বর্ধন খামার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যা ১৯৭৬ সালে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র হিসাবে পূর্ণতা লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি 'হাটহাজারী কৃষি ফার্ম' হিসাবে লোকে-মূখে বেশ পরিচিতি লাভ করে।
চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর থেকে ২২ কি.মি. উত্তরে হাটহাজারী বাজার থেকে ১ কি.মি. পশ্চিমে ৬২.৭৫ হেক্টর (প্রায় ১৫৫ একর) জায়গাজুড়ে নয়নাভিরাম এ গবেষণা কেন্দ্রটি অবস্থিত। এখানে রয়েছে হরেক-রকম ফল-ফলাদির বাগান ও গবেষণা প্লট। কেন্দ্রের সেচ সুবিধার জন্য রয়েছে ছয়টি পুকুর ও একটি আকর্ষণীয় লেক। গবেষণা কেন্দ্রটি মূলতঃ এতদঞ্চলের কৃষি সমস্যা চিহ্নিত করে কৃষকের চাহিদা মোতাবেক গবেষণা কর্ম চালিয়ে থাকে। দেশী-বেদেশী-স্থানীয় বিভিন্ন রকম ফল, সব্জি, কন্দাল ফসল, মসলাজাতীয় ফসল, ডাল ও তৈলবীজ, ফুল ও দানাদার ফসলের উপর ফলিত, প্রায়োগিক, আর্থ-সামাজিক ও বিপনন বিষয়ে গবেষণা করে থাকে কেন্দ্রটি। এখানে রয়েছে উদ্ভিদ রোগতত্ত্বের একটি আধুনিক গবেষণাগার যেখানে উপকারি ব্যাক্টেরিয়া (বেসিলাস) এর মাধ্যেম কার্যকরভাবে ফসলের রোগ-বালাই দমন নিয়ে গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। গবেষণা কেন্দ্রটির বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে ফসলের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ, মূল্যায়ন ও সংরক্ষণ; ফসলের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন; ফসল ব্যবস্থাপনা ও রোগ-বালাই দমন; মৃত্তিকা, পানি ও সেচ ব্যবস্থাপনা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং আর্থ-সামাজিক ও বিপনন বিষয়ে বিভিন্ন ফসলের উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখানে রয়েছে বারি উদ্ভাবিত বহুবর্ষজীবী বিভিন্ন ফসলের মাতৃবাগান যেখান রোগমুক্ত মানসম্পন্ন প্রোপাগিউল সংগ্রহ করা হয়। এখানে রয়েছে একটি আধুনিক নার্সারি যেখানে বারি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীলজাতের বিভিন্ন ফসলের চারা, কলম উৎপাদন করা হয়। কেন্দ্রে গবেষণাধীন বিভিন্ন ফসলের প্রজনন বীজ উৎপাদন করা হয়। উৎপাদনের পাশাপাশি কেন্দ্রে উৎপাদিত বীজ, চারা, কলমসমূহ বিতরন ও বিক্রির সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ে কৃষক ও কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্ট্যাকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি পরামর্শ প্রদান করা এ কেন্দ্রের অন্যতম কাজ। উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ কৃষকের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তুলতে কেন্দ্রের তত্বাবধানে মাঠ পর্যায়ে এডাপটিভ ট্রায়াল (উপযোগিতা পরীক্ষা) করা ও মাঠ দিবস আয়োজন করা হয়। গবেষণার ফলাফলভিত্তিক বিভিন্ন প্রকাশনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে নিয়মিত প্রকাশ করা হয়। গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা কেন্দ্রটির অন্যতম একটি কাজ। গবেষণা কেন্দ্রটিতে সাতটি গবেষণা বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলো হলো- উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, মৃত্তিকা বিভাগ, কৃষি প্রকৌশল বিভাগ এবং কৃষি অর্থনীতি বিভাগ। এছাড়াও একটি আইসিটি শাখা রয়েছে। মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা (অফিস প্রধান) হিসেবে বিভাগগুলোর কার্যক্রম সমন্বয়সাধন করে থাকেন। গবেষণা কেন্দ্রটিতে মোট ২৪ জন বিজ্ঞানীর পদের বিপরীতে বর্তমানে বিজ্ঞানী কর্মরত রয়েছে ৮ জন। ৯ জন বৈজ্ঞানিক সহকারীর বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে ৮ জন। আর ১২০ জন নিয়মিত-অনিয়মিত শ্রমিকের বিপরীতে রয়েছে ৭২ জন শ্রমিক। কেন্দ্রটির গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরনে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানী/জনবল পদায়ন অতীব জরুরী।
জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বৃহত্তর সমুদ্র বন্দর, স্থল বন্দর ও বিমান বন্দর থাকায় এ অঞ্চলের মান-সম্মত কৃষিপণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বহুগুণ। বৈচিত্র্যপূর্ণ এ অঞ্চলের কৃষির রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। কর্ণফুলী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাংগু, মাতামহুরী, বাকখালী ও ইছামতি নদী এ অঞ্চলের কৃষিকে করেছে সমৃদ্ধ। ভূমির বন্ধুরতা, ফসলের কম উৎপাদনশীলতা, সেচ সমস্যা, ফসলের পোকা ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ, ফসল সংগ্রহোত্তর জ্ঞানের স্বল্পতা, অসময়ে বৃষ্টি, বন্যা, খরা, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, সাইক্লোন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নগরায়নের ফলে কৃষি জমি কমে যাওয়া, অনাবাদী জমির আধিক্য, অপর্যাপ্ত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, বাজার কাঠামোর দুর্বলতা ও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব এতদঞ্চলের কৃষির অন্যতম সমস্যা। তাই সার্বিক বিবেচনায় এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গবেষণা কেন্দ্রটির গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস